আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): আল্লাহ রাব্বুল আলমিন চান যে মানুষ এমন এক স্তরে পৌঁছাক, যেখানে সে নিজেই অনুধাবন করবে যে প্রকৃত মুক্তি কোন পথে অর্জিত হয়। এই উপলব্ধি হচ্ছে মানবজাতির দীর্ঘ ইতিহাসের অভিজ্ঞতা, পরাজয় ও বিজয়, এবং নৈতিক পরীক্ষার ফল যা মানুষ যুগে যুগে অতিক্রম করেছে।
শেষযুগের ত্রাণকর্তা কেবল কোনো বাহ্যিক রক্ষাকারী ও উদ্ধারকর্তা নন, বরং মানবীয় প্রজ্ঞার পূর্ণতার প্রতীক; এটি সেই মুহূর্ত, যখন মানুষ উপলব্ধি করে যে ন্যায়বিচার, করুণা এবং সত্য কেবলমাত্র ঐশ্বরিক উৎসের সঙ্গে সংযোগের ছায়ায় অর্থবহ।
এই প্রেক্ষাপটে দুই মহান ব্যক্তিত্ব ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলোতে বিশেষভাবে উজ্জ্বল: ইসলামী চিন্তায় ইমাম মাহদী (আ.ফা.) এবং খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যে হযরত ঈসা (আ.), উভয়েই ন্যায় ও করুণার বাস্তবায়নের প্রতীক; তাঁদের সত্তা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা ঐশ্বরিক ও মানবিক আদর্শের জীবন্ত প্রতিফলন।
ইসলামী বর্ণনাগুলোতে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি আবির্ভাবের মাধ্যমে অন্যায় ও অবিচার দূর করবেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন এবং মানবজাতিকে ঐশ্বরিক সত্যের গভীরতর বোধের পথে পরিচালিত করবেন। তিনি সেই আশার প্রতীক, যা ইতিহাসের অন্তরালে জীবিত রয়েছে—যিনি মানুষকে এক ন্যায়ভিত্তিক পৃথিবী গঠনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যে হযরত ঈসা (আ.)-এর প্রত্যাবর্তনকে অবিচারের অবসান ও বিশ্বব্যাপী শান্তির সূচনার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তাঁর দয়া, সহানুভূতি ও পথনির্দেশের গুণাবলি স্মরণ করিয়ে দেয় যে মানবতার প্রকৃত মুক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ এবং ঐশ্বরিক মূল্যবোধের অনুসরণের মাধ্যমেই সম্ভব।
ইসলামী বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত ঈসা (আ.) হযরত মাহদী (আ.ফা.)-এর আবির্ভাবের সময় অবতীর্ণ হবেন এবং তাঁর সঙ্গে থেকে ন্যায় প্রতিষ্ঠার কাজে অংশ নেবেন। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “মাহদী আমার বংশধর; যখন তিনি প্রকাশিত হবেন, তখন মারিয়মের পুত্র ঈসা তাঁর সাহায্যে অবতীর্ণ হবেন এবং তাঁর পেছনে ইমামতি ছেড়ে নামাজ আদায় করবেন।”
এই বাণী আল্লাহপ্রদত্ত সমস্ত ধর্মের ঐক্য ও বিশ্বব্যাপী ন্যায় প্রতিষ্টার মহা-প্রতিশ্রুতির প্রতীক।
ঈসা (আ.) ও মাহদী (আ.ফা.)-এর এই সহযাত্রা পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক এবং প্রমাণ যে মুক্তির প্রতিশ্রুতি সব মহান ধর্মের জন্যই এক ও অভিন্ন। এই ঐশ্বরিক মিলন সর্বাপেক্ষা মূল্যবান প্রতিশ্রুতি, কারণ এটি দেখায়—আল্লাহ মানুষকে একা রেখে দেননি; বরং দুই মহান মুক্তিদাতার উপস্থিতির মাধ্যমে মুক্তির পথ সুস্পষ্ট করেছেন। এই প্রতিশ্রুতি কেবল এক দূর ভবিষ্যতের নয়, বরং আমাদের বর্তমান জীবনের অর্থ ও আলোকও প্রকাশ করে।
এই প্রতিশ্রুতি উপলব্ধি করা—অর্থাৎ এই সত্য অনুধাবন করা যে ইতিহাসের পরিসমাপ্তি হলো অবিচারের সমাপ্তি এবং করুণার সূচনা—সেটিই সেই গন্তব্য, যার দিকে মানবীয় উন্নতির সকল পথ ধাবিত। অতএব, শেষযুগের ত্রাণকর্তা (মাহদী/মসীহ) বিষয়ে ধ্যান করা হলো এমন এক সত্য নিয়ে চিন্তা করা, যা ধর্মীয় সীমানা পেরিয়ে মানুষের এক অভিন্ন আশা হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে নিষ্ক্রিয় অপেক্ষার ঊর্ধ্বে নিয়ে যায় এবং মুক্তির পথে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়। এমন গভীর চিন্তা বর্তমান সময়েই মুক্তির পথকে আলোকিত করতে পারে এবং মানুষকে ন্যায় ও করুণায় পরিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

Your Comment